চিরনিন্দুক সংবাদমাধ্যমগুলো সম্প্রতি ডিজিটাল টাইমে জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে একটা হৈ চৈ বাধানোর চেষ্টা করছে। এটি আমাদের সংবাদমাধ্যমের একটি পুরানো রোগ।�যা কিছু কল্যাণকর তার পিছনে তারা লেগে যায়। হয়তো এ কারণে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছিলেন, 'কুত্তার বাচ্চা সাংবাদিক'।
বলা হচ্ছে, ঢাকার জুনিয়র স্কুলগুলোর প্রায় সবকটি শুরু হয় আটটায়। অনেকেরই স্কুল বাসা থেকে বেশ দূরে। আটটায় স্কুলে পৌঁছাতে তাই বাসা থেকে রওনা দিতে হয় সাতটার আগে, অন্ধকার থাকতে। এতে স্কুলগামী শিশুদের নিরাপত্তা সংকট তৈরী হচ্ছে। অনেকে আবার বেআক্কেলের মত বলছেন, প্রধানমন্ত্রী তার চৌদ্দগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইন করেছেন, অথচ শিশুদেরকে অন্ধকারে রাস্তায় বের করে দিচ্ছেন। এমনকি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার উদ্দেশ্যে ঘড়ির কাঁটা একঘন্টা এগিয়ে নেয়ার কথা বলা হলেও তাতে নাকি কোন লাভ হয় নি বলে প্রচার করা হচ্ছে। এর মধ্যে আবার একজন সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নেয়া নাকি বেআইনী। এ জাতির দুর্ভাগ্য যে কোন ভালো উদ্যোগই মানুষ বুঝতে পারলো না। একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে শীতকালে ঘড়ির কাঁটা একঘন্টা এগিয়ে থাকার ফলে দেশে প্রচুর নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মনে রাখতে হবে এই সরকারের অন্যতম লোভনীয় নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল প্রত্যেক পরিবারের একজন সদস্যের চাকুরীর ব্যবস্থা করা। সরকারী দলের নেতা-কর্মীরা রাত-দিন পরিশ্রম করে যোগ্য চাকুরীপ্রার্থীদের একটি তালিকা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমাও দিয়েছে। তবে এটি একটি অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য উদ্যোগ।�অথচ, শুধুমাত্র শীতকালে ঘড়ির কাঁটা একঘন্টা এগিয়ে রাখার ফলে সরকারী কোষাগার থেকে কোনরকম অর্থব্যয় ছাড়াই লক্ষাধিক নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। কয়েকদিনের মধ্যেই স্কুলগামী শিশুদেরকে নিয়ে তাদের মায়েদেরকে অন্ধকার থাকতে পথে বের হতে হবে।�অন্ধকারের সাথে যুক্ত হবে ঘন কুয়াশা। তৈরী হবে ছিনতাই এর আদর্শ পরিবেশ।�শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন যদি পাঁচ হাজার ছিনতাই সম্ভব হয়, তাহলে এর মাধ্যমে দশ হাজার বেকার তরুণের কর্মসংস্থান হবে। (এখানে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করার বিষয়টিও ভাবতে হবে)। সারা দেশে আরও হাজার পঞ্চাশেক ছিনতাই ঘটানো গেলে সৃষ্টি হবে এক লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান।�এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ছিনতাই বাংলাদেশে এখন একটি স্বীকৃত পেশা। স্বয়ং পুলিশের উপস্থিতিতে দিনে-দুপুরে টেন্ডার ছিনতাই হচ্ছে। এমনকি ডিজিটাল সরকারের অনেক দেশপ্রেমিক পুলিশও এই পেশাতে পার্ট টাইম কাজ করছেন।�ফলে ছিনতাই পেশাকে খারাপ চোখে দেখার দিন বদলে গেছে।�এই পেশার সাথে জড়িতদের জন্য একটি সুন্দর নাম বাছাই এবং এই পেশার বিষয়ে সাধারণ মানুষের ভুল ধারণা দূর করতে বিশ্বব্যাংক বা ইউনিসেফের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এনজিওগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। প্রত্যেক ভালো কাজেরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে।� এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জনগণকে টুকটাক ছুরিকাঘাত, খুন-জখম মেনে নিতে হবে।�তবে, নিম্নলিখিত কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হলে ছিনতাই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেকটা কমে যাবে:
১. এক ধরণের স্বল্পমূল্যের ওয়ান টাইম মানিব্যাগের প্রবর্তন করতে হবে যার এক প্রান্তে সুতা বাধা থাকবে। মানিব্যাগটি বিনামূল্যে জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
২. ছিনতাইকারীদেরকে এক ধরণের রেডিয়ামযুক্ত আইডি কার্ড দেয়া হবে যা অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করবে।
৩. জনগণের মধ্যে এই মর্মে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে যাতে তারা সকালে বের হবার সময় বিশেষ মানিব্যাগে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা রেখে সুতার একপ্রান্তে ধরে হাটতে থাকে এবং ছিনতাকারী তার রেডিয়ামযুক্ত আইডি কার্ড দেখানোর সাথে সাথে মানিব্যাগের সুতাটা ছেড়ে দেয়। এর ফলে ছিনতাইকালে কোনরূপ অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না।
৪. একই ব্যক্তির নিকট হতে যাতে সপ্তাহে একাধিকবার ছিনতাই না করা হয়, সে উদ্দেশ্যে ছিনতাইকারীদেরকে রেডিয়ামযুক্ত টোকেন দেয়া হবে।�মানিব্যাগ গ্রহণ করার পর ছিনতাইকারী মানিব্যাগের মালিককে একটি টোকেন দিবে যা তিনি পকেট, ওড়না বা দৃশ্যমান কোন স্থানে লাগিয়ে রাখবেন। একেক সপ্তাহের জন্য একেক রঙ বা ডিজাইনের টোকেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. ছিনতাইকারীদেরকে বাছাই করা, আইডি কার্ড ও টোকেন বিতরণ - ইত্যাদি যথেষ্ট শ্রমসাধ্য কাজ।�এই ধরণের কাজের জন্য যে আত্মত্যাগ ও কারিগরী দক্ষতা প্রয়োজন তা ইতোমধ্যে ছাত্রলীগ নামে আমাদের দেশীয় একটি সংস্থা যথেষ্ট পরিমাণে অর্জন ও প্রদর্শন করেছে।�ফলে তাদেরকে এই গুরু দায়িত্বটি অর্পন করা যায়।
৬. এই বিশাল এ মহান উদ্যোগটি যাতে সুচারু ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্নভাবে সমাধা করা যায় সে উদ্দেশ্যে একটি প্রকল্প নেয়া যেতে পারে।� বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ করলে তারা এর অর্থায়ন করতে রাজী হবে।�যেহেতু প্রকল্পটি সরাসরি বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের সাথে সম্পর্কিত এবং যেহেতু এই প্রকল্পে যে ধরনের কারিগরী দক্ষতা প্রয়োজন তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজ দলেই সর্বাপেক্ষা বেশী বিদ্যমান, তাই তাঁকেই এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা যেতে পারে।� এই প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি বিদেশ ভ্রমণ থাকলে তিনি এতে সদয় সম্মতি প্রদান করবেন বলে আশা করা যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন বাংলাদেশে যা কিছু কল্যাণকর ঘটেছে তা তাঁর দলের অবদান। উপরোক্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশের জনগণের জন্য তার দলের অবদানের তালিকায় আরও একটি উজ্জ্বল ছত্র যুক্ত হবে।
No comments:
Post a Comment